Disagreement Hierarchy

 সময় বদলেছে। বদলে গেছে চিন্তা, কথা, আচরণ ও যোগাযোগের ধরন। আজ থেকে দশক তিনেক আগে লিখতেন একজন, পড়তেন শত, হাজার কিংবা লক্ষজন। আজ যখন একজন লিখেন তখন সেটা নিয়েই লিখেন আরো দশজন। কমেন্ট সেকশানে, ফোরামে, নিজস্ব ব্লগ কিংবা সাইটে।

লেখালেখিকে ইন্টারনেট পরিণত করেছে একধরনের কথোপকথনে। আর সবকিছুর চেয়ে ঝগড়াটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি জমে। সাধারণত কারো সাথে একমত হলে লাইক, রিয়্যাক্ট কিংবা বেশি থেকে বেশি দু-এক শব্দ কিংবা লাইনে “সহমত” বলা ছাড়া তেমন কিছু যোগ করার থাকে না। কিন্তু মতের অমিল হলে একদিকে যেমন থাকে বলার অনেক কিছু, তেমনি দ্বিমত আর তর্ক করার জেদ, মোটিভেইশান কিংবা জযবাও থাকে আরো জোরদার।
মেয়েদের ছবিতে লাইক-কমেন্ট বেশি হবে এটা যেমন সত্য, ইনবক্সে মাঝেমধ্যে দশজনের কাছে ফরওয়ার্ড না করলে অন্ধ, পঙ্গু কিংবা সারাজীবন অবিবাহিত থাকার অভিশাপ নিয়ে মেসেজ আসা যেমন সত্য ; তেমনি তর্কবিতর্ক, পাল্টাপাল্টি লেখা আর আদি ও অকৃত্রিম ঝগড়ার খেলা অনলাইনে জমে বেশি— একথাও সত্য।
সামনাসামনি যা বলা কঠিন, অনলাইনে সেটা লেখা খুব সহজ। ফলাফল হলো বাড়তে থাকা মতপার্থক্য, কমতে থাকা আদব, আর অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্ক ও মতপার্থক্যের মানের অবনতি। এখানে জ্ঞানী হওয়া যেমন সহজ, ভদ্র হওয়াও সহজ। কিন্তু বাস্তবজীবনের অনেক ভদ্র মানুষও এখানে ভদ্রতা বজায় রাখতে পারে না, আর অনেক জ্ঞানীর জ্ঞানের দৌড়ও লাইক-কমেন্ট করে অ্যাক্টিভ থাকার কারণে বেড়িয়ে আসে। রাতারাতি ধসে পড়ে সযত্নে গড়ে তোলা ইমেজ।
ভালো বলুন কিংবা খারাপ— ইন্টারনেট কথোপকথনের ধরনটাই এমন। মতপার্থক্য হবেই, হবে তর্কবিতর্ক, ঝগড়া, মনোমালিন্য, স্ট্র্যাটিজিক অ্যালায়েন্স আর সাময়িক “শান্তিচুক্তি”। এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। আমার মনে হয় দরকারও নেই। তবে মতপার্থক্যে সমস্যা না থাকলেও, সমস্যা আছে মতপার্থক্যের আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকা নিম্নমান নিয়ে।
বিরোধিতা করবেন? করুন। কিন্তু এমনভাবে করুন যাতে আপনার এবং আপনার প্রতিপক্ষের সময়টা ফালতু নষ্ট না হয়। দিনশেষে যেন নিছক “ঝগড়ায় জেতা” ছাড়াও অন্য কোনো প্রাপ্তি আপনার ঝুলিতে থাকে। সেটা হতে পারে আপনার নিজের মতাদর্শের প্রচার, হতে পারে অন্যের মতাদর্শের সত্যিকারের খণ্ডন কিংবা সাধারণ পাঠকের জানাশোনার পরিধি কিছুটা হলেও বাড়ানো। তাই মতবিরোধ করুন, কিন্তু ভালোভাবে করুন। সুন্দর, অর্থবোধকভাবে করুন।
এ কাজটা সুন্দরভাবে করার জন্য একটা সত্যিকারের ভালো আর্গুমেন্ট আর সস্তা কিন্তু সুলিখিত গলাবাজির মধ্যে পার্থক্য ধরতে শেখা প্রয়োজন। আর এজন্য দরকার মতবিরোধের নানা ধরন নিয়ে জানা।

ডিসএগ্রিমেন্ট হায়ারার্কি — মতবিরোধের নানা ধরন

মতবিরোধের নানা ধরন আছে, আছে স্তর। আমরা একে একটা পিরামিডের মতো ধরে নিতে পারি। সবচেয়ে বেশি মানুষের অবস্থান নিচের স্তরে। ওপরে ওঠার সাথে সাথে তা কমতে থাকে।
১ম স্তর : লেবেলিং, ট্যাগ কিংবা গালি দেয়া
কোনো মতের বিরোধিতা করার সবচেয়ে নিম্নস্তরের উপায় হল গালাগালি, লেবেলিং বা ট্যাগিং। পুরো ইন্টারনেট জগতে সবচেয়ে বেশি চলে এটাই। বাংলাদেশের নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীরা এ কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী। অনেক দালিলিক ও যৌক্তিক আলোচনার নিচে নাস্তিকদের “হ্যাঁ মোমিনরা তো এসবই বলবা, ছাগু গিয়া কাঠালপাতা চিবাও” জাতীয় কমেন্ট দেখা বিচিত্র না। কাউকে গালি দেয়ার মাধ্যমে বা কোনো লেবেলিং এর মাধ্যমে তার মতের বিরুদ্ধে কিছুই বলা হয় না, বরং প্রমাণ হয় গালিদাতার বিরোধিতা করে কিছু বলার নেই অথবা সামর্থ্য নেই।
লেবেলিং এর ব্যাপারে তিনটি বিষয় বুঝা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হল, এধরনের বিরোধিতা সবসময় খিস্তিখেউর হিসেবে আসে না। অনেক সময় বেশ সফিসটিকেইটেডভাবে একাজটা করা যায়। যেমন “তুমি ছাগু, তাই চুপ থাকো” এই কথার সাথে মানের দিক দিয়ে পরের কথাগুলোর কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই— “বর্তমান বিশ্বকাঠামো ও সমাজবাস্তবতায়, মানবসভ্যতার যে মোড়ে আজ আমরা এসে দাড়িয়েছি তাতে মুসলিমদের একথাগুলোর কোনো চিন্তাগত, আদর্শিক ও মেটাফিযিকাল গুরুত্ব নেই ; কারণ তারা ধর্মান্ধ”। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, কোনো জ্ঞানী লোক লেবেলিং করলে সেটা ভালো আর্গুমেন্ট হয়ে যায় না। জ্ঞানী লোক করলেও লেবেলিং নিম্নমানের আর্গুমেন্টই। তৃতীয়ত, লেবেলিং আর্গুমেন্ট হিসেবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলেও প্রতিপক্ষকে চুপ করানোর জন্য বা অ্যাপ্রোচ পরিবর্তনে বাধ্য করার জন্য লেবেলিং সাময়িকভাবে বেশ কার্যকরী। যেমন, “এই ছাগু কি শাহবাগী?” অথবা “চুপ থাক খারেজি / তুই চুপ থাক মুরজিয়া”। তবে সাময়িকভাবে কার্যকরী হলেও আর্গুমেন্ট হিসেবে এটা নিকৃষ্টই থাকে।
২য় স্তর : অ্যাড হমিনেম (ad hominem)
লেখক বা বক্তার মূল বক্তব্য বা যুক্তিকে এড়িয়ে গিয়ে ব্যক্তি আক্রমণ করা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। মানের দিক দিয়ে অ্যাড হমিনেম গালাগালির বা ট্যাগবাজির মতো অতোটা দুর্বল না। অ্যাড হমিনেম আর্গুমেন্টের কিছু যৌক্তিকতা থাকত পারে। যেমন— আমি তার কথা মানি না কারণ তার পরিচয় অজ্ঞাত। একথার মধ্যে কিছুটা যুক্তি থাকতে পারে, কিন্তু এতে করে বিরোধিতা খুব একটা শক্তিশালী হচ্ছে না। অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করার সময় সতর্ক হওয়াই যৌক্তিক, এবং উচিৎ তার কথা যাচাই করে নেয়া। কিন্তু “সে অজ্ঞাত” এ কথা দিয়ে কিন্তু তার কোনো কথা কিংবা দাবির খণ্ডন হচ্ছে না।
বুঝলাম সে অজ্ঞাত, কিন্তু তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ন হলো সে যা লিখছে বা বলছে তা কি ঠিক না বেঠিক। যদি তার কথা ভুল হয় তাহলে সে অজ্ঞাত হোক বা জ্ঞাত, ভুল তো ভুলই। আর যদি সে সত্য বলে, তাহলে কি আপনি সত্য বাদ দিয়ে মিথ্যের অনুসরণ করবেন কারণ “সে অজ্ঞাত”? কাজেই জ্ঞাত-অজ্ঞাত নিয়ে সময় নষ্ট না করে, তার কথা যাচাই করে ভুল বা সঠিক প্রমাণ করলে এক লাইনেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে।
৩য় স্তর : টোন নিয়ে অভিযোগ
লেখকের বা বক্তার মূল বক্তব্যের খণ্ডন না করে তার লেখা বা বলার ধাঁচ বা টোন নিয়ে সমালোচনা। এতক্ষণে ফোকাস সরে আসে লেখক থেকে লেখার দিকে। “যার কথা এতো আগ্রাসী, এতো আনসফিসটিকেইটেড, তার কথা কখনো সঠিক হতে পারে না। এদের কথা নিয়ে আলোচনারও আসলে কিছু নেই।” যদিও এটা লেখককে আক্রমণ করার চেয়ে উন্নতমানের, কিন্তু আর্গুমেন্ট হিসেবে দিনশেষে এটাও বেশ দুর্বল।
লেখকের টোনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কন্টেন্ট। একজন খুব খারাপ টোনে সত্য কথা বলতে পারে। তার টোনের কারণে কথাটা মিথ্যে হয়ে যাবে না। এটা তার উপস্থাপনার ত্রুটি কিন্তু বক্তব্যের ত্রুটি না। একইভাবে একজন অনেক সুন্দরভাবে, মার্জিত টোনে, আত্মবিশ্বাসের সাথে ভুলভাল কথা বলে যেতে পারে। কিন্তু এতে ভুল শুদ্ধ হয়ে যাবে না। সুতরাং কোনো বক্তব্য বা লেখার ক্ষেত্রে আপনার যদি সর্বোচ্চ আপত্তি এই হয় যে “তার টোন খারাপ”, তাহলে আসলে আপনি তার তেমন কোনো বিরোধিতা করছেন না। আপনার উচিৎ বক্তব্যের ভুলের দিকে মনোযোগী হওয়া।
৪র্থ স্তর : কেবলই বিরোধিতা
বক্তব্যের বিরোধিতা করা, বিপরীত মত দেয়া, কিন্তু কোনো/যথেষ্ট যুক্তি বা প্রমাণ উপস্থাপন না করা। এ পর্যায়ে এসে আমরা শেষপর্যন্ত বক্তা কিংবা তার উপস্থাপনার বদলে বিরোধিতা দেখতে পাই বক্তব্য নিয়ে। এধরনের বিরোধিতার একেবারে নিচের পর্যায় হল, কোনো মতের বিরোধিতা করে বিপরীত মত প্রকাশ করা। কিন্তু নিজের মতের পক্ষে কোনো যুক্তি ও প্রমাণ না দেয়া। অনেক সময় এটার সাথে ১ম, ২য় ও ৩য় স্তরের সংমিশ্রন ঘটে। “এরা কীভাবে এতো সহজে, ভাসাভাসা বুঝ নিয়ে বলে দেয় গণতন্ত্র ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক? অথচ সুস্পষ্ট সত্য হল গণতন্ত্র ইসলামসম্মত! আসলে এরা হল আক্ষরিক যাহিরি বুঝের নাজদী।” কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো কোনো মতের বিরুদ্ধমত জানানোটাই যথেষ্ট হয় ; কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দরকার হয় যুক্তি-প্রমাণের।
৫ম স্তর : কাউন্টার আর্গুমেন্ট
বিরোধিতা করার পাশাপাশি নিজ অবস্থানের স্বপক্ষে যুক্তি এবং/অথবা প্রমাণ উপস্থাপন করা। এবার আমরা সিরিয়াসলি নেয়ার মতো মতপার্থক্যের পর্যায়ে পৌছেছি। এর আগের স্তরগুলোকে গুরত্ব দেয়া সাধারণত অর্থহীন। সেগুলোর ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া মানে সময় নষ্ট করা ; সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার অর্থ নিজের চিন্তার মানকে টেনে নিচে নামানো।
কাউন্টার আর্গুমেন্ট দুটো বিষয়ের সংমিশ্রণ। কাউন্টার আর্গুমেন্ট = বিরোধিতা + যুক্তি ও প্রমাণ। মূল বক্তব্যের বিরুদ্ধে কাউন্টার আর্গুমেন্ট দেয়া হলে সেটা বেশ কনভিন্সিং হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিরোধিতাকারী এমন কোনো কিছুর বিরুদ্ধে কাউন্টার আর্গুমেন্ট দেয় যেটা মূল বক্তা বলেনি। অনেক সময় মূল বক্তব্যের চেয়ে আলাদা কিছু নিয়ে আলোচনার বৈধ কারণ থাকে। তবে এরকম করার আগে, কেনো লেখক বা বক্তার মূল বক্তব্য বাদ দিয়ে অন্য কিছুর বিরুদ্ধে আর্গুমেন্ট দেয়া হচ্ছে সেটা সরাসরি পরিষ্কার করা দরকার।
৬ষ্ঠ স্তর : খণ্ডন
মূল বক্তব্যের ভুল ধরে, উদ্ধৃতি ও উদাহরণসহ তা উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করা। সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধিতা হল রিফিউটেইশান বা খণ্ডন। এধরণের বিরোধিতা সবচেয়ে দুর্লভও। কারণ এর পেছনে ভালো রকমের সময় দিতে হয়। কারো লেখার খণ্ডন করতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিতে হয়। তার লেখা অ্যাকচুয়ালি পড়তে হয়, বুঝতে হয়। বুঝার পর ভুল খুঁজে বের করতে হয়, তারপর সেই ভুলকে তুলে ধরে তৃতীয় পক্ষের বোধগম্য হয় এমনভাবে বুঝাতে হয়। সাথে দিতে হয় যুক্তি ও প্রমাণ।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, কারো লেখা কৌট করে বিরোধিতা করার মানেই সত্যিকারের খণ্ডন না। অনেক সময় কারো লেখা পড়ে মনে হতে পারে সে উদ্ধৃতিসহ খণ্ডন করছে, কিন্তু আসলে হয়তো উদ্ধৃতি দেয়ার পর সে ১ম, ৩য় ও ৪র্থ স্তরের মতো কোনো নিম্নমানের আর্গুমেন্ট দিচ্ছে। অথবা হতে পারে সে ইচ্ছাকৃতভাবে লেখকের বক্তব্য থেকে এমন কোনো ব্যাখ্যা বের করছে যা লেখক আদৌ বুঝায়নি, এবং তারপর সে ঐ অপব্যাখ্যার খণ্ডন করছে। এধরণের আর্গুমেন্টকে বলা হয় স্ট্র-ম্যান আর্গুমেন্ট।
উদাহরণ :
মূল বক্তব্য — যারা বলে ২+২ = ৫, তারা ভুল। তারা হয় যোগবিয়োগের বেইসিকই জানে না অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বলছে। অংক শেখানোর ব্যাপারে এধরনের লোকের ওপর বিশ্বাস করা যায় না।
স্ট্র ম্যান আর্গুমেন্ট — “আজ বলা হচ্ছে আমি বিশ্বাসযোগ্য না। অমুক মহান ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য না। বলা হচ্ছে আমরা মুনাফিক, আমরা মিথ্যাবাদী। অথচ আল্লাহ সাক্ষী! আজ পর্যন্ত অনেকের সাথে আমি মিশেছি, অনেকের সাথে আমার লেনদেন হয়েছে ; মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, কারো দু টাকা আমি মেরে খেয়েছি কি না? কখনো কারো কাছ থেকে ৫ টাকা ধার নিয়েছি কি না? কেউ বলতে পারবে না। আর এ শিক্ষা আমি পেয়েছি অমুক মহান ব্যক্তির কাছ থেকে। অথচ আজ বলা হচ্ছে আমি-আমরা নাকি মিথ্যাবাদী! আমাদের ওপর নাকি ভরসা রাখা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না!”
স্ট্র-ম্যান সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের কুতর্কের অন্যতম, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্র-ম্যান আর্গুমেন্টের উদ্দেশ্য থাকে যেকোনো মূল্যে তর্কে জেতা।
৭ম স্তর : মূল প্রস্তাবনার / বক্তব্যের খণ্ডন
সরাসরি বক্তার মূল প্রস্তাবনার খণ্ডন করা। খণ্ডনের মান ও শক্তি নির্ভর করছে আপনি কী খণ্ডন করছেন তার ওপর। আপনি প্রতিপক্ষের কোনো সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি পয়েন্ট ধরে দিনের পর দিন সেটার খণ্ডন করে যেতে পারেন। অথবা আপনি পারেন তার মূল প্রস্তাবনা বা প্রস্তাবনাগুলোর খণ্ডন করতে। সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধিতা হলো প্রতিপক্ষের মূল আর্গুমেন্ট, তার সেন্ট্রাল পয়েন্টের দালিলিক ও যৌক্তিক খণ্ডন। ঠিকমতো করতে পারলে এটা প্রতিপক্ষকে (বা তার কোনো মূল দাবিকে) ধসিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট (যদিও সে হয়তো স্বীকার করবে না) এবং এধরনের আলোচনাই মূলত কাম্য।
পিরামিডের ৬ষ্ঠ স্তর পর্যন্তও অসততা কাজ করতে পারে। যেমন, কেউ ইচ্ছে করলেই যেতে পারে স্ট্র-ম্যান আর্গুমেন্টের দিকে। কিন্তু সত্যিকারভাবে কারো বক্তব্যের জবাব দেয়া এবং সেটাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য প্রতিপক্ষের প্রধান দাবিগুলোর কমপক্ষে একটিকে আপনার ভুল প্রমাণ করতে হবে। সেটার খণ্ডন করতে হবে যুক্তি, প্রমাণ ও দলিলসহ। এটার বাইরে নানা সাইড ইস্যু নিয়ে আপনি দিস্তার পর দিস্তা লিখতে পারেন, উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি দিতে পারেন, দিতে পারেন ডজন ডজন প্রমাণ ; কিন্তু এতে করে প্রতিপক্ষের মূল অবস্থানকে খণ্ডন করা হয় না। কাজেই সত্যিকারভাবে কার্যকরী খণ্ডন অনেকটা এরকম হবে— “আলোচ্য বক্তা বা লেখকের মূল প্রস্তাবনা হচ্ছে ‘ক’, কারণ তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধৃতি’ ; কিন্তু তার এই অবস্থান ‘এই, এই’ কারণে ভুল...”
তো এই হচ্ছে মতবিরোধের ৭টি ধরন বা স্তর। সর্বনিকৃষ্ট থেকে সর্বোৎকৃষ্ট। ডিসএগ্রিমেন্টের এই হায়ারার্কি আপনাকে বিতর্ক কে জিতলো তা হয়তো জানাবে না, কিন্তু ভালোভাবে সততার সাথে তর্ক করতে আপনাকে সাহায্য করবে। যদি আপনি সততার সাথে তা করতে চান।
লেখক : আসিফ আদনান (হাফিযাহুল্লাহ)
পরিমার্জনকারী ও ছবি রিমেইক : তানভীর আহমেদ রবিন
পল গ্রাহাম'র "How to Disagree" অবলম্বনে-http://www.paulgraham.com/disagree.html?fbclid=IwAR2vb8uT1vrFLX2lT49MdGrsGCKnq_Set5upkcGSzCkX_Qclng0Hl4i_pcA

মন্তব্যসমূহ