অনেক বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম ও ঘটনার সাথে ধর্মগ্রন্থের কিছু বক্তব্য বা কনসেপ্ট সমান্তরালে রাখা হয়। এর মধ্যে চিন্তাভাবনা ও সংশয়ের ব্যাপার যেমন আছে, আবার আছে অনেক কন্সপিরেসি থিওরী।
তবে কিছু কিছু ঘটনা বাদ দেওয়া যায় না, কারন এসব ব্যাপার ডকুমেন্টেড হয়ে পড়ে। যেমন বিল্ডারবার্গ ক্লাবের অস্তিত্ব, সিআইএ’র এমকে-আল্টরা প্রজেক্ট, জর্জ সোরোস এর দেশে দেশে রাজনৈতিক পটভুমিকায় ফান্ডিং ইত্যাদি।
তেমনি একটা ব্যাপার হল পেটেন্ট ০৬০৬০৬, এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, বৈশ্বিক পরিসরে তাদের কাজকর্ম। এবং এরসাথে বাইবেলের কিছু কনসেপ্ট যা অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত।
বিগত ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে রেজিষ্টার্ড হয় পেটেন্ট WO/2020/060606, যার আবেদনকারী মাইক্রোসফট টেকনোলজী লাইসেন্সিং LLC. আবেদন পড়েছিল ২০ জুন ২০১৯ তারিখে। এই LLC (লিমিটেড লায়্যাবিলিটি) ফার্মটির প্রধান খুবই পরিচিত একজন ব্যাক্তি, বিল গেটস। ২২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে এ পেটেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটাস পায়।
এর টাইটেল ছিল “Cryptocurrency system using body activity data”।
এই পেটেন্ট টেকনোলজীটা আসলে কি? পেটেন্ট আবেদনের সারসংক্ষেপ(abstract) এ উল্লেখিত কথা মূল ইংরেজিতেই দিচ্ছি:
“Human body activity associated with a task provided to a user may be used in a mining process of a cryptocurrency system. A server may provide a task to a device of a user which is communicatively coupled to the server. A sensor communicatively coupled to or comprised in the device of the user may sense body activity of the user. Body activity data may be generated based on the sensed body activity of the user. The cryptocurrency system communicatively coupled to the device of the user may verify if the body activity data satisfies one or more conditions set by the cryptocurrency system, and award cryptocurrency to the user whose body activity data is verified.”
সহজভাবে বলতে গেলে, মানবদেহে একটি চিপ বসানো হবে, যা প্রাত্যহিক শারীরিক কর্মকান্ড মনিটর করবে। শর্তমাফিক(condition) কাজকর্ম সম্পাদন হলে ঐ ব্যাক্তিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বোনাস দেওয়া হবে যা সে ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে।
এই প্রযুক্তি কোন কোন দেশে ব্যাবহার করার টর্গেট তার একটি লিস্টও দেওয়া হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে জাতিসংঘের অধীন সকল দেশেই!
শরীরে মাইক্রোচিপ বসানো তেমন নতুন কিছু নয়। বেশ একটা সময় ধরেই ইউএসতে চলে আসছে Masonic Youth Child Identification Program (http://www.mychip.org/home). অনেকে তো নিজ শরীরে বিবিধ ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে নিজেকে সাইন্সবর্গীয় বলে ভাব নিয়ে থাকে! তবে এসব কর্মকান্ডের সাথে মাইক্রোসফটের জড়িত হওয়াটা বেশ ইন্টারেস্টিং, তারউপর প্যাটেন্ট নম্বর হল ০৬০৬০৬! এটা কি একদমই কাকতালীয় নাকি ইচ্ছাকৃত যে প্যাটেন্ট নম্বরের সংখ্যাটা বাইবেলের নাম্বার অব দ্যা বিষ্ট (Number of the Beast from book of revelation).
আজকাল বিল গেটসের নাম প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। হরেক রকমের কাজকর্মে এ ব্যাক্তির আকর্ষণ ও আগ্রহ উল্লেখযোগ্য। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী, ভ্যাক্সিনেশান প্রজেক্ট, WHO ফান্ডিং ইত্যদি ইত্যাদি। যদিও বৈশ্বিক মিডিয়াতে তার জনহতৈষী ইমেজ খুব বড় করেই তুলে ধরা হয় এবং তার কর্মকান্ডের ব্যাপারে আক্রমন ও সমালোচনা সমস্ত উপায়েই এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবুও ওয়েবের এ যুগে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে কানেকশান পুরোপুরি ঢেকে রাখা যায় না।
বিল গেটসের কোম্পানি আরও একটি বিশেষ প্রজেক্টে যুক্ত। ডিজিটাল আইডি প্রজেক্ট ID2020 অ্যালায়েন্স (https://id2020.org/) । এ প্রজেক্টের ওয়েবসাইটের হোমপেজে বলা আছে যে ডিজিটাল রাইটস ইস্যুতে তারা কারছে ২০১৬ থেকেই। ২০১৮ তে তারা অ্যালায়েন্স জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশন(United Nations High Commissioner for Refugees) এর সাথে কাজ করে। এ অ্যালায়েন্সে মাইক্রোসফটের পাশাপাশি আরও রয়েছে রকফেলার ফাউন্ডেশান, ডিজাইন ফার্ম IDEO,org, কনসাল্টিং ফার্ম এক্সেনচ্যুর(Accenture), এবং ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স Gavi(সারাবিশ্বে সক্রিয়ভাবে ভ্যাক্সিন প্রচার ও বিতরণের কাজ করে)। এই আইডি2020 অ্যালায়েন্সের সাচিবিক দপ্তর নিউইউর্কএ।

ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্স কোম্পানী Gavi (https://www.gavi.org/) র কাজ মূলত আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশসমূহে। ইউরোপের কেবল আলবানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মলদোভা, ইউক্রেন, এবং ককেশাস অঞ্চলের জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানে তাদের কাজ চলে। Gavi’র সাথে সম্পর্ক আছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশান, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, WHO, এবং ইউনিসেফ এর। এরা সবাই হচ্ছে Gavi’র ফান্ডিং পার্টনার।
ফেবরুয়ারী ২০২০ থেকে ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্স Gavi কাজ করে যাচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে। এর সিইও ড. সেথ বার্কলে, একজন এপিডেমিওলজিষ্ট(epidemiologist)। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি রকফেলার ফাউন্ডেশানে কাজ শুরু করেন। আট বছর কাজ করেন সেখানে এবং পরবর্তীতে সেখানকার ফরেন রিলেশান কাউন্সিলের একজন ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি নিজে নিউইয়র্কের লোক এবং নিউইউর্কভিত্তিক অ্যাকুমেন(Acumen) ফান্ডের একজন অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল মেম্বার।
এই লিংকগুলো খুবই ইন্টারেষ্টিং। প্যাটেন্টের ধর্মতাত্বিক বিষয়ে বিশ্লেষণে সবচেয়ে ভাল করবেন ধর্মীয় ব্যাপারে এক্সপার্টরা। কিন্তু আমরা এখানে এই টেকনোলজীর সাথে অদ্ভুত সম্পর্কগুলো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি রকফেলার ফাউন্ডেশান, মাইক্রোসফট, ফার্মাসিউটিক্যাল লবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রমুখ। তাদের পরে আছে অনেক সেকেন্ডারী সার্ভিস প্রোভাইডার।
সংক্রামক রোগ, অসুস্থতা, দূর্ভিক্ষ ইত্যাদি পটভুমিতে জাতীয় সরকারগুলোর এককভাবে কাজ করতে না পারার পরিস্থিতিতে তারা সবাই মিলে এক বহির্জাতিক(supranational) সরকারের ভুমিকায় যাবার চেষ্টা করছে।
ওদিকে পরিসংখ্যান ডাটা নিয়ে সংশয় তৈরী হলেও (https://www.wsj.com/articles/wuhans-coronavirus-death-toll-surges-by-50-after-china-reviews-data-11587110435) চীন দেখিয়েছে যে তারা এককভাবেই এসব পরিস্থিতি সামলাতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো এ বিষয়টা নিয়ে(এককভাবে কাজ করা) কিছু বলতে চায়ও না, পারেও না। অনেকাংশেই এর কারন হল তারা পাওয়ার শেয়ার করতে চায় না। ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক মিডিয়া তাদের ইনফরমেশান ক্যাম্পেইন চালিয়ে যায় যেখানে পশ্চিম ছাড়া যেকারো উপরেই ব্যার্থতার দায় বসানো হয়।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন