বেলফোর ডিকলারেশান এবং কৃতঘ্ন ইহুদী জাতির স্বরূপ



   বর্তমান পৃথিবীর দুটো বিন্যাস রয়েছে। প্রাচীন বিন্যাস তথা ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সূচনা হয়েছে ইসা আ.-এর ঊর্ধ্বাগমনের ৭০ বছর পরে এবং তা চলেছে ফরাসি বিপ্লব পর্যন্ত। আর নতুন বিন্যাস তথা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর পর থেকে সূচিত হয়ে অদ্যাবধি জারি রয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, ওল্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার হোক বা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার—উভয়টির সূচনা ইসা আ.-এর ঊর্ধ্বাগমনের পরে।
ইসা আ.-এর ঊর্ধ্বাগমনের ৭০ বছর পরে রোমকদের গভর্নর টাইটাস (Titus) ইহুদিদেরকে জেরুজালেম থেকে বের করে দেয়। সেই ৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৮৮২ বছর ইহুদিরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করে। ১৭ অক্টোবর ১৯১৭ তারিখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেনের জেনারেল অ্যালেনবি (General Edmund Allenby) মুসলমানদের হাত থেকে জেরুজালেম ছিনিয়ে নেয়। অ্যালেনবির সেই বাহিনীতে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের সাহায্যে গমন করা সেনাবাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল; যাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মুসলমান সেনাও ছিল।
২ নভেম্বর ১৯১৭ তারিখে ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড জেমস বেলফোর (Lord James Balfour) ঐতিহাসিক Balfour Declaration জারি করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে Zionist Movement ইজরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনের সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা লাভ করে। সে সময়ই জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপন করার উদ্দেশ্যে ব্রিটেন তা পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেয়। এরপর ১৯৪৮ সালে United Nations এক ঘোষণার অধীনে ফিলিস্তিনের ওপর থেকে ব্রিটিশদের দখল সরিয়ে ইহুদিদেরকে বসতি স্থাপন করার জন্য তা অর্পণ করে।
ইহুদিদের পুরো ইতিহাস পড়লে জানা যায়, একদিকে তারা ইসলামি ভূখণ্ডগুলোতে চুক্তিবদ্ধ জিম্মি হিসেবে মুসলিমদের অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়ে বসবাস করে আসছিল, অন্যদিকে গোটা ইউরোপে রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা তাদেরকে ইসা আ.-এর হত্যাকারী বিবেচনা করে থার্ড ক্লাস নাগরিকদের মর্যাদাও দিত না। প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীতেও তাদের চাকরি প্রাপ্তির কোনো অধিকার ছিল না। ইহুদিরা ইউরোপে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারত, ইউরোপের জায়গিরদারি প্রথায় যাকে তৃতীয় স্তরের পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এই ১৮৮২ বছরে তারা নিজেদের সবচে বড় দুশমন খ্রিষ্টানদেরকে কীভাবে যেন বন্ধু বানিয়ে ফেলল। এমনকি তাদের সাহায্য নিয়ে শুধু ফিলিস্তিনে ইজরাইল রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করল না; বরং গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপরও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল।
এই পর্যায়ে এসে আমাদের অন্তরে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। যেমন : ইহুদিরা কেন ইসা আ.-এর দুশমনে পরিণত হলো? কেনই বা আল্লাহর প্রিয়ভাজন বনি ইসরাইল সম্প্রদায় মুসলমান থেকে গজবগ্রস্ত ইহুদিতে রূপান্তরিত হলো? মুসলমান থেকে ইহুদি হওয়ার পর ৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ১৮৮২ সালব্যাপী তারা কোন উদ্দেশ্যে সারা পৃথিবীতে ঘুরে ফিরল এবং শেষাবধি তারা নিজেদের লক্ষ্য কীভাবে অর্জন করল? ইউরোপের খ্রিষ্টান জগত—এককালে যা ইহুদিদের প্রাণের শত্রু ছিল—আজ কীভাবে এতটা অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে উঠল যে, তাদের সাহায্যার্থে নিজেদের বাহিনী পাঠিয়ে ইজরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে সহযোগিতা করল? আখের ইউরোপের খ্রিষ্ট সম্প্রদায় কীভাবে তাদের এতটা আপন হয়ে গেল?
এসকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদেরকে ইহুদিদের প্রাচীন এবং নতুন ইতিহাসের পাতা উল্টাতে হবে। ইহুদিদের প্রাচীন ইতিহাস ইয়াকুব আ. থেকে শুরু করে ইসা আ. পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। আর তাদের নতুন ইতিহাস ইসা আ. থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত দুই হাজার উনিশ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত। ...
---- (দ্রোহের তপ্ত লাভাঃ আলী হাসান উসামা)


মন্তব্যসমূহ