এতোদিন ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলিদের নির্মমতা দেখে অভ্যস্ত ছিলাম কিংবা সিরিয়া, ইরাক, আফগানে নানামুখী গণহত্যা ৷ অভ্যস্ত বললে ভুল হবে, অনেকটা কষ্ট করেই সহ্য করতাম ৷ আর ভাবতাম এগুলোই বোধয় নির্মমতার সর্বনিকৃষ্ট দৃশ্য ৷ হ্যাঁ বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বার্মাতে ঘটে আসা রোহিঙ্গাদের উপর নির্মমতাও চোখে পড়তো ৷ তবে তখন অবধি তা ততোটা নৃশংসতা ধারণ করেনি ৷ বর্মা বদলে হলো মায়ানমার ৷ থামেনি নির্যাতন ৷ দেখেছি কিছু রোহিঙ্গা খেতাব প্রাপ্ত মানুষের সাবলীল জীবনধারনের আশায় দেশত্যাগ ৷ পরদেশে আশ্রয়ের সন্ধানে সাগরে পাড়ি জমানো দু'একটি ডিঙ্গা ৷ কিন্তু হঠাতই নির্মমতা চরম বিভৎসতায় রূপ নেয় ৷ আর ঠিক তখনই বন্ধ হয়ে যায় পাশের দেশের বর্ডার, জোরদার হয় বর্ডারে নজরদারি, সাথে একটি পাষাণ শব্দ পুশব্যাক ৷ পাশাপাশি অন্ধত্ব বরণ করে বিশ্ব মানবতার চোখ ৷ পোড়া কাঠ দিয়ে যেনো পোড়া লাশের গন্ধ বেরুচ্ছে, কিংবা ঘরের কোনায় পড়ে থাকা প্রয়োজনীয় ছোরাটিকে মনে হতে লাগলো বার্মিজদের তৈরি ছোরা, তাতে বোধয় লেগে আছে কোনো রোহিঙ্গার রক্ত ৷ এটা কোনো হ্যালোসিনেশন কিনা জানিনা ৷ তবে এটুকু জানি পাশের দেশটিতে মজলুমের প্রাণ নিয়ে খেলছে একদল জালিম ৷ কি এক বিভৎস রক্তের হোলিখেলা ! মজলুম তুমি শুধু মরার জন্য ৷ বাচার আকুতি সে তুমায় মানায় না ! হয় মরো না হয় টেররিস্ট নাম ধারণ করে মরো ৷ এই দুটোই কেবল অপশন ৷ নৃশংসভাবে মরতে তাদের হবেই ৷ এতোদিন আত্মরক্ষার কোনো চেষ্টা ছিলোনা, কিন্তু যেই না আত্মরক্ষার তাগিদে লড়াই করা শুরু করলো ঠিক তখনই নবরূপে টেররিষ্ট নাম নিয়ে মরতে হচ্ছে ৷ সে মৃত্যু বেড়ে গেলো বহুগুণ, বহুগুণে নৃশংস ৷ আফসোসের সুর যেনো অট্টহাসির মতো করে মজলুমের কানে বাজছে ৷ ঠিক যেনো নাট্যমঞ্চে কোনো অভিনেতার অভিনয় দেখে আপ্লুত হবার প্রহসন ৷ গণতন্ত্রের পথে কাজ করছে নাকি, তাই শান্তির পতাকা নোবেল হাতে দেখা গেলো এক রক্তপিপাসুকে ৷ এটাইতো পাওয়ার এলিটদের বিচার ৷ সাগরে ভাসছে মানবতাকামী আর হচ্ছে পুশব্যাক ৷ এদিকে মানবতার ধ্বজাধারীরা অনু বারো মাস বসন্তের সুগ্রাণে বিভোর ৷ মজলুমের আর্তনাদ দেখেনা তারা, বাচার তাগিদে সংগ্রামী মজলুমের মাঝে দেখে টেররিজম ৷ কাটাতারের বেড়ার ওপারে কিংবা জল সীমান্তে ভেসে থাকা মানুষের বাচার আকুতি দেখেনা কেউ আর ৷
![]() |
| রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জালিয়ে দিয়ে ঘরহারা করার দৃশ্য |
![]() |
| বাঁচার জন্য সাগরে ভাসছে রোহিঙ্গারা |
![]() |
| মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্মম গণহত্যা চিত্র |
বর্ডার খুলে দিন ৷ নির্যাতিত নারী-শিশুদের রক্ষা করুন, সাথে অক্ষম বৃদ্ধদের ও ৷ রোহিঙ্গার আগে তারা মানুষ, কিছু নারী ও শিশু ৷ বর্ডার খুলে দিন ৷ আশ্রয় দিন মানবতাকে ৷ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা সকল দেশ ৷ জাতিসংঘ বর্ডার খুলে দিতে বলেই দায়সারা ৷ দাবি উত্থাপন করুন একটি সদস্য দেশ হিসেবে যাতে করে অমানবিকতা বন্ধে তারা পদক্ষেপ নেয় ৷ তবুও বর্ডার খুলে দিন, মৃত পিতার পাশে বসে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করুন ৷ উদ্ধার করুন বিভৎস, নৃশংসভাবে ধর্ষিত হতে চলা নারীদেরকে ৷ বর্ডার শুধু সীমান্তে খুললতে চলবে না, বর্ডার খুলে দিন বিবেকের, আর বর্ডার খুলে দিন সুবিচারের ৷ রুখে দিন অমানুষদের নির্মমতা ৷ না হয় আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হওয়া পোড়া বিভৎস লাশটি একদিন গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে দিবে আর কখনও ঘুমুতে দিবেনা ৷ কিংবা ছোরার আঘাতে বিক্ষত লাশ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত ভীষণ পিপাসায় গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েই উপস্থিত হবে সেই গ্লাসে ৷ কিংবা সেই শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনা যাবে কোনো এক অচেনা ফোন কলে ৷ পারবেন তো সইতে? হঠাত ঘুমের মাঝে কোনো এক দুঃস্বপ্নে সাগরের মাঝে নৌকায় ভাসতে থাকা নিজেকে আবিষ্কার করেও তীরে এসে সীমান্ত রক্ষীর পুশব্যাক, পারবেন সইতে? যদি না পারেন তবে খুলে দিন বর্ডার, খুলে দিতে বলুন অন্য রাষ্টেরগুলোকেও আর খুলে দিন বিবেকের বর্ডার ৷ রুখে দিন নির্মমতা ৷





মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন