ফ্যাসিবাদী অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার দোলাচলে মানব জাতির চিত্ত বিভ্রমের স্বরূপ

ফ্যাসিবাদী অর্থনীতির বাস্তবচিত্র 

এই ভূ-খন্ডে মানুষ প্রতিনিয়ত অর্থনীতির দোলাচলে পৃষ্ঠ হতে হতেই হামাগুড়ি দিয়ে চলছে ৷ মানুষের চিত্তে অর্থচিন্তন সর্বোচ্চ জায়গা জুড়ে বিরাজমান ৷ সে হতদরিদ্র থেকে শুরু করে অতি উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ৷ যার নেই সেও অর্থচিন্তায় মগ্ন আর যার আছে সেও ৷ ফলে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে সুচিন্তা করার অবকাশ তাদের অধিকাংশেরই নেই ৷ আর অর্থচিন্তার পরে অন্য যে সমস্ত চিন্তা তাদের চিত্তের কিয়দংশ জুড়ে স্থান পায় তাও কোনো না কোনও দিক দিয়ে অর্থনীতির সাথেই সংশ্লিষ্ট ৷ অর্থচিন্তার প্রকটতা এই সমাজটিকে পুরোদমে ভোভোগবাদীসমাজে পরিণত করেছে ৷ যার আছে তার আরও চাই ৷ না চাইলেও চাই ৷ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে চাই ৷ প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনেও চাই ৷ তবে এই ভোগবাদী লোভী সমাজে এখনো কিছু মানুষ ধৈর্য্য ধারণ করে সঠিক পন্থায় টিকে আছে ৷ আত্মহত্যা জায়েয থাকলে নিশ্চিত তাঁরা এতদিনে গত থাকতেন ৷ ভোগবাদী সমাজ কেবল যে অর্থনৈতিক লোভ নিয়ে চলে তাই নয় ৷ তাদের মাঝে আরও একটি মারাত্নক লোভ বিরাজ করছে; তা হলো অপসাংস্কৃতির লোভ যেটাকে অনেকটা অশ্লীলতা কিংবা বেহায়াপনার লোভও বলা চলে ৷ পাশাপাশি আছে পৈশাচিক আনন্দ লাভের লোভ ৷ এতক্ষন যে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে এ সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য আয়েশপূর্ণ জীবন ৷ কিন্তু না ৷ নিজের জীবনের চূড়ান্ত ক্ষতি সাধন করে এবং প্রতিটা মূহূর্ত নিজেকে কষ্টের মধ্যে রেখেও এই ভোগবাদী সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ পৈশাচিক আনন্দ পায় ৷ তবে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে গেলে এ সমস্ত কিছুর পেছনে রয়েছে দুষ্ট অর্থচিন্তা ৷ এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে কথাগুলো অর্থনীতির বিরুদ্ধাচরণ বৈ কিছু নয় ৷ অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে কি মানব জীবন সম্ভব? এমন প্রশ্নও মাথায় আসতে পারে ৷ মন্তব্যটি আংশিক সত্য ৷ কারণ অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে যেমন মানব জীবন সম্ভব নয় তেমনি উপরোক্ত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অর্থনীতির বিরুদ্ধেও নয় বরং এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যা কিনা একটি নির্দিষ্ট মহল দ্বারা নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাপিয়ে দেওয়া ৷ আর এই ব্যবস্থাটি এমন একটি ফ্যসিবাদি ব্যবস্থা যা কিনা গ্রাস করে নিয়েছে অন্য সকল ব্যবস্থাকে ৷ অর্থাত বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্য সমস্ত কিছুকে জড়িয়ে এর অধীনস্থ করেছে ৷ বর্তমানে এমন কোনো বিষয় খুজে পাওয়া দুঃষ্কর যার সাথে এই ফ্যাসিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যোগসূত্র নেই কিংবা এর দ্বারস্থ হতে হয়না ৷ কিন্তু কি সেই ফ্যাসিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কিংবা কারা জড়িত এবং কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই ফ্যাসিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে?


সম্পদ কুক্ষিগত করে সকল কে দাসে পরিনত করা (অর্থ ব্যবস্থা)ঃ

বিশ্বের শাসন করতে হলে অর্থনৈতিক ভাবে অবশ্যই জবরদখল রাখতে হবে, তাই সকলের সম্পদ ও সময়(মুল্য) কে নিজের দখলে আনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে সকলে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে যাবে আর সময় অতিবাহিতের সাথে সাথে সেই ব্যবস্থা অন্যের সম্পদ ও সময় হ্রাস করে দাজ্জালী শক্তির হাতে তুলে দেবে।

আর এই ব্যবস্থা হল আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা (International Monetary  system), যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য হল কাগুজে মুদ্রা (Paper Money)।  এই কাগুজে মুদ্রা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা দিনার ও দিরহাম কে(Gold  & Silver) ছুড়ে ফেলে (Replace) স্থান দখল করে নিয়েছে। দিনার ও দিরহামের মূল বৈশিষ্ট হল ‘অন্তর্নিহিত মুল্য’ (Intrinsic Value) অর্থাৎ মুদ্রার মুল্য মুদ্রার ভিতরেই ছিল,গোল্ড ও সিলভার এর নিজস্ব একটি মুল্য আছে কিন্তু কাগজের কোন মুল্য নেই। আর এটাই হলো এদের মূল
পার্থক্য।
আজ থেকে ১০০ বছর আগেও যদি আমাদের সম্পদ কেউ কেড়ে নিতে চাইত তবে তাকে অবশ্যই আমাদের ঘরে বা পকেটে হাত দিতে হত
কিন্তু এখন পকেটে হাত না দিয়েই টাকা কেড়ে নেয়া যায়,আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র কাগুজে মুদ্রার ফলে,কারন এটার কোন অন্তর্নিহিত মুল্য নেই।
বাবা পরিশ্রম করে ছেলের জন্য ১০ লক্ষ টানা জমিয়ে একটা লকারে রেখে দিয়েছেন আর বলেছেন ১০ বছর পর সে এই টাকা গুলো বের করে নিজের প্রয়োজন মিটাবে,১০ বছর পর যখন ছেলে টাকা বের করলো(লকারে এর আগে কেউ হাত দেইনি তবুও) তখন সে দেখল সেখানে দেখেতে ১০ লক্ষ কিন্তু প্রকৃত ভাবে ৯ লক্ষ টাকা আছে অর্থাৎ ১০ বছর আগে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে যা কেনা যেত এখন সেটা দিয়ে তা কেনা যাবে না কারন মুদ্রাস্ফীতি (Inflation)’র ফলে মুদ্রার মুল্যমান (Purchasing power) কমে গিয়েছে,তাই ১০ বছর পর সেই টাকার মুল্যমান ৯ লক্ষ হয়ে গেল যদিও তার বাবা ১০ লক্ষ টাকার জন্য ১০ লক্ষ টাকার পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করেছিলেন।
দুনিয়ায় সকলের সমান সম্পদ হবে এমন আশা করা যায় না। তবে সবাই, যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম, সময়, ও মূলধন দিয়ে সম্পদ আয় করার সমান সুযোগ পাবে এটাই আল্লাহর বিধান। কিন্তু এই সমান সুযোগ (Equal Opportunity) এখন বাধাগ্রস্থ হয়েছে।
কিছু মানুষের হাতে এখন রয়েছে এই সুযোগ, তাই এখন দেখা যাচ্ছে পাহাড় সমান বৈষম্য, ধনী ও গরীবের মধ্যে ব্যাপক অসমতা ফলে তৈরি হয়েছে ধনী দেশ ও গরীব দেশ। তাই আমরা দেখি যদি কেউ বাংলাদেশের মত দেশে জন্ম হলেই সে গরীব হয়ে যায় আর আমেরিকায় জন্ম নিলেই ধনী, একটু ঘুরিয়ে বললে মুনিব ও দাস। আমরা সুদী ব্যবস্থা কে হয়ত দায়ী করবো কিন্তু আমরা একটু
চিন্তা করলেই দেখতে পাবো এটার জন্য প্রধান ভাবে দায়ী হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা তথা
কাগুজে মুদ্রা বা সুন্নাহ মুদ্রার অনুপস্থিতি।
ইসলামে অনুমোদিত বা সুন্নাহ মুদ্রা আমরা তাকেই বলতে পারি যার মূল্য মুদ্রার ভিতরেই থাকে এবং তা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থায়ী
থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সেই মুদ্রার যোগান ও চাহিদা মানুষের হাতে নয় আল্লাহর হাতে থাকবে মানে প্রকৃতি (Nature) বলে দিবে এখন কোনটার মুল্য মান কত হবে, অর্থাৎ কোন মানুষ মূল্যমান কে প্রভাবিত করতে পারবে না। মুল্যমান হল একটা নির্দিষ্ট মুল্যে কতটুকু পন্য কেনা যায়।
যেমন আজকে থেকে ১০ বছর আগে ৫ টাকা দিয়ে যা কেনা যেত এখন ৫ টাকা দিয়ে তা কেনা যায় না কারন মুল্যের মান কমে গেছে।
উদাহরণঃ দিনার বা স্বর্ণ কে আমরা ইসলামিক মুদ্রা বা সুন্নাহ মুদ্রা/মানি বলতে পারি, কারন এটার মান কত হবে সেটা আল্লাহই নির্ধারণ করে দেন। যেমন কাগুজে মুদ্রার যত ইচ্ছা যোগান (supply) দেয়া যাবে,কিন্তু প্রকৃতি ঠিক করে দিবে স্বর্ণের উৎপাদন কত হবে। আর যেকোন
জিনিসের যোগান ও চাহিদাই তার মান নির্ধারণ করে দেয়। আবার স্বর্ণ মুদ্রায়, মূল্য স্বর্ণের মধ্যেই থাকে এবং তার একটা স্থায়িত্বও আছে (Expected life) যা কাগুজে মুদ্রাই থাকেনা।

দাদা-নাতির উদাহরনে গোল্ড ও দিনারের সাথে বোগাস কাগুজে মুদ্রার পার্থক্য পরিষ্কার হবে—


একজন দাদা হজ্জ হতে আসার সময় ১০০ টি
স্বর্ণ মুদ্রা (আউন্স) নিয়ে এসে ১৯৭১ সনে জন্ম হওয়া নাতিকে উপহার দেয় এই শর্তে যে নাতির বয়স ১৮ পূর্ণ হবার পর এই সম্পদ তাকে হস্তান্তর করতে হবে বলে সে তার ছেলের কাছে মুদ্রা গুলো দিয়ে দিলেন। কিন্তু ছেলে বুদ্ধিমান তাই সে ৫০ টি
মুদ্রা US DOLAR দিয়ে এক্সচেঞ্জ করে নিলেন, পেলেন ৫০*৩৫=১৫০০ ডলার। নোট গুলো সহ স্বর্ণমুদ্রা গুলো সিন্দুকে জমা রাখলেন। ১৯৮৯ সনে ১৮ বছর পূর্তিতে নাতী তার সম্পদ হাতে
তুলে নিয়ে বাজারে গেল, ১৫০০ ডলার বিক্রয় করে সে পেল ১৫০০*৩২=৪৮,০০০ টাকা আর অন্য দিকে ৫০টি দিনার বিক্রয় করে পেল ৫০*৬৫০০= ৩,২৫,০০০ টাকা অর্থাৎ ডলার তথা কাগুজে মুদ্রার কারনে ৫০ টি দিনার ডলারে পরিবর্তন করার জন্য ক্ষতি হলো (৩,২৫,০০০-৪৮,০০০)=২,৭৭,০০০ টাকা।


The supply of Gold is limited but supply of Paper is unlimited for money


মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রন করে সরকার। আর যখন সরকার বেশি পরিমাণে কাগুজে মুদ্রা বাজারে ছাড়ে তখন মুদ্রার মুল্যমান কমতে থাকে, কিন্ত
দিনার বা দিরহাম সরকার চাইলেই সরবরাহ করতে পারেনা কারন এর উৎপাদন সীমিত। মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে গেলে তাকে মুদ্রাস্ফীতি
বা ইনফ্লেইশন বলে,আর এর ফলে মুদ্রার মুল্যমান কমে যায়।
উদাহরণঃ মানুষের হাতে খুব কম টাকা আছে এমন একজন জমি বিক্রেতা যদি তার জমি অধিক মূল্যে বিক্রি করতে চায় তবে মানুষ টাকার স্বল্পতার কারনে কিনবে না ৷


দাদা-নাতির উদাহরনে ডলারে মুল্যমান হ্রাস পাওয়ার কারনে ২,৭৭,০০০ টাকার ক্ষতি হল। আর ডলার যেহেতু একমাত্র মুদ্রা (পেট্র-ডলার)
যার মাধ্যমে তেল কেনা যাবে, তাই ডলার সরবরাহর পরিবর্তন পুরো বিশ্বের সকল কারেন্সি কে প্রভাবিত করে। বছরের পর বছর ডলারের মুল্যমান কমেই যাচ্ছে- ১৯১৩ সালে ১ ডলার দিয়ে যা কেনা যেত এখন শতকরা ৯৫ ভাগেরও কম কেনা যায়।


রাসূল (সা) এর যুগে ১ দিনার (৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ) দিয়ে একটা ছাগল কেনা যেত আজ ১ দিনার বর্তমান (১২,৫০০ টাকা) মূল্য  দিয়ে একটা ছাগল কেনা যাবে কারন এর কোন মূল্যমান
হ্রাস হয়না।




কাগুজে মুদ্রার মান কমেই যাচ্ছে

স্বর্ণমুদ্রার মান অপরিবর্তিত 


কাগুজে মুদ্রার ইতিবৃত্ত 
(দাজ্জালের এক শক্তিশালী অস্ত্র)ঃ


কাগুজে মুদ্রা বা Paper money কখন ও কোথায় প্রথম ব্যবহার হয় এটা স্পষ্ট নয়, তবে ১৮০০ শতাব্দীতে ব্যাংক নোট প্রথমে দেখা যায়, ১৮৭০-১৯১৭ পর্যন্ত Classical gold standard কাগুজে মূদ্রা ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ সেন্ট্রাল ব্যাংক প্রথমে গোল্ড জমা করে রাখবে আর যত টুকু গোল্ড তাদের কাছে আছে ততটুকু কাগুজে মুদ্রা
ছাপাবে (১০০% রিজার্ভ অনুপাত)। মানে কাগুজে টাকা হল একটা ‘চেক’ যা দিয়ে সব কিছু ক্রয় করা যাবে আর প্রয়োজনে ব্যাংকে জমা দিয়ে
তার বিনিময়ে চেকে উল্লেখিত মূল্যের গোল্ড দাবী করা যাবে। আমরা বলতে পারি,

২০ ডলারের বিল (চেক/টাকা)=২০ ডলার গোল্ড। (১০০% রিজার্ভ)


তো এখানে এমন কোন সুযোগ নেই যে সরকার চাইলেই যতইচ্ছা চেক বা কগুজে মুদ্রা প্রিন্ট করতে পারে, কারন যদি বেশি ছাপিয়ে দেয় তবে চেক/টাকার বিনিময়ে গোল্ড ফিরত দিতে পারবে না। এভাবেই চলছিল কিন্ত ১ম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে মানুষ আর ব্যংকে যেতে পারতো না ফলে কাগুজে মুদ্রার বিনিময়ে গোল্ড পরিবর্তন করা কমে গেল আর চেক/কাগুজে মুদ্রার টাকা
দিয়ে সবাই লেনদেন করা শুরু করলো, আর এই সুযোগে সরকার পাগলের মত মুদ্রা ছাপাতে লাগলো। এতে ইউরোপীয় দেশসমূহ মুদ্রাস্ফীতির
সম্মুখীন হয়, আর জার্মানি তে Hyperinflation দেখা দেয়, জার্মান মার্কের মান এত কমে যায় যে একটা পত্রিকার দাম ১ মার্ক থেকে ১ বছর
পর ৭ কোটি মার্ক হয়ে যায়, আর অনেকে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় মার্ক/টাকা পুরিয়ে খাবার রান্না করে।



জার্মানিতে হাইপার ইনফ্লেইশান: বাচ্চারা মার্ক নিয়ে খেলছে আর লোকটি বস্তা ভর্তি মার্ক/টাকা নিয়ে কফি কিনতে যাচ্ছে!




















তাই ১৯১৬-১৯৪৪ পর্যন্ত আগের ১০০% রিজার্ভ সিস্টেম বাতিল হয়ে গিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু হল Gold Exchange Standard অর্থাৎ কত টুকু কাগুজে মুদ্রার বিনিময়ে ব্যাংক থেকে কতটুকু গোল্ড দাবী করা
যাবে, সেটা কেন্দ্রীয় ব্যংক নির্ধারণ করবে।

Classical gold standard – 

২০ ডলারের বিল (চেক/টাকা)= ২০ডলার গোল্ড। (১০০% রিজার্ভ )

বদলে গিয়ে

Gold Exchange Standard  -
৫০ ডলারের বিল (চেক/টাকা)= ২০ ডলার গোল্ড। (৪০% রিজার্ভ)

যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী ও যুদ্ধবিধ্বস্ত সকলদেশের প্রচুর নিত্যপন্য ও অস্ত্রের প্রয়োজন ছিল আর  যেহেতু অ্যামেরিকা উভয় বিশ্বযুদ্ধেই প্রায় শেষের সময়ে অংশগ্রহণ করে তাই
প্রয়োজনীয় মেটেরিয়ালস এর সামগ্রিক যোগান দাতা হয়ে গেল আমেরিকা। সে সময়ে স্বর্ণের
মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য হত তাই আমেরিকা খুব অল্প সময়ে অর্থনীতিক ভাবে অনেক লাভবান হল, আর পন্যের বিনিময়ে বিশ্বের ২/৩ (Central Bank gold) স্বর্ণের রিজার্ভ কারী দেশ হয়ে গেল। আমেরিকার জাতীয় আয় (National Income) অকল্পনীয় ভাবে বেড়ে ১৯৩৩ সালে -৪৬ বিলিয়ন,
থেকে ১৯৩৯ সালে- ৭১ বিলিয়ন পরে তা ১৯৪৩ সালে- ১৪২ বিলিয়নে পৌঁছল অর্থাৎ মাত্র ১০ বছরে ৩ গুন আয় বৃদ্ধি পেল।

“যুদ্ধ অর্থনীতির জন্য খুব ভালো, যদি তুমি যুদ্ধের বাহিরে থেকে পন্য ও অস্ত্রের যোগান দাও” এই নীতিতে বিশ্বাসী আমেরিকা তাই করলো যুদ্ধে লাগাতে উস্কানি ঠিকি দিত তবে যুদ্ধে জড়াত না যখন ফায়দা লুটা হয়ে যেত তখন আরও বেশী করে লুটার জন্য যুদ্ধ শামিল হয়ে জয় ছিনিয়ে নিত। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা তাই করলো।

যাইহোক, বাকি পুরো দুনিয়ার কাছে মাত্র ১ ভাগ স্বর্ণ রিজার্ভ থাকার কারনে ইউরোপের কোন দেশ
আর আগের মত গোল্ড রিজার্ভ রেখে কাগুজে মুদ্রা ছাপাতে পারলো না ফলে পুরো বিশ্ব মনেটারি সিস্টেম আবার পতন ঘটলো। আর এর মধ্যেই
আমেরিকা প্রচুর ডলার (কাগুজে মুদ্রা) ইউরোপের বাজারে ছেঁড়ে দিল।

এইভাবেই ১৯৪৪ সালে একটি কনফেরেন্স ডেকে সকলের সম্মতি তে ডলার এর উপর ভিত্তি করে ব্রিটন উড (Bretton Woods)  নামে একটি নতুন বিশ্ব মনেটারি/মুদ্রা সিস্টেম চালু হল।

Gold Standard সিস্টেমে সকল দেশের

সেন্ট্রাল ব্যাংক তাদের নিজস্ব কারেন্সি ছাপায় গোল্ড রিজার্ভ রেখে। যেমন- বাংলাদেশের
টাকা/জাপানী ইয়েন/ডলার = গোল্ড (১ টাকার বিনিময়ের জন্য ব্যাংক তত পরিমাণ গোল্ড সংরক্ষণ করতো)

সহজ ভাষায় গোল্ড আগে যে কাজ 
করত এখন ডলার তা করছে, গোল্ডের জায়গা ডলার দখল করেছে। হুম যদিও সিস্টেম অনুযায়ী আমেরিকার
সেন্ট্রাল ব্যাংক ডলার ছাপানোর আগে অবশ্যই তার পিছনে গোল্ড সংরক্ষণ (রিজার্ভ) করবে।


তবে সেই রিজার্ভের কোন নির্দিষ্ট অনুপাত নির্ধারণ করা ছিল না যেমনটা আগে ছিল ১০০%
রিজার্ভ অথবা ৪০%। তাই আমেরিকা ইচ্ছা মত ডলার ছাপালো আর এক্সপোর্ট করা শুরু করলো। ১৯৬০ এর দশকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস ডিগল প্রথমে উত্থাপন করেন যে ডলার এর পিছনে গোল্ডের রিজার্ভ নেই মানে ০% রিজার্ভ। ফলে ফ্রান্স তাদের কাছে যত ডলার ছিলো তার বিনিময়ে গোল্ড দাবী করে
আমেরিকার কাছে আমেরিকাও বাধ্য হয়ে গোল্ড দেই, তবে এইভাবে একে একে আরো সকল দেশ ও চেয়ে বসল তখন আমেরিকা বিপাকে পড়ল।
ডলারের প্রতি সকলের বিশ্বাস ও ভ্যালু মান কমা শুরু হল। আমেরিকা তাদের কাছে গোল্ডের মজুদের চেয়ে ১২ গুন বেশি ডলার ছাপিয়ে ছিল। ফলে ১৯৫৯-১৯৭১ সালের মধ্যে আমেরিকা
৫০% তাদের সংরক্ষিত গোল্ডের মজুদ হারালো। পরিশেষে ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচারড নিকসন, ডলারের সাথে গোল্ড রূপান্তরকে বাতিল করল এবং প্রস্তাব করল যে International Monetary fund (IMF) এর সহযোগিতাই আমেরিকা প্রয়োজনীয় মাফিক ডলার ছাপাবে
আর একটি নতুন মনেটারি সেস্টেম তৈরি করবে। তখন আবার Bretton Woods Agreement বাতিল হয়ে আবারো নতুন মনেটারি সেস্টেম আসলো যার নাম Dollar Standard
Bretton Woods Agreement সিস্টেমে
বাংলাদেশের টাকা/জাপানী ইয়েন=ডলার = গোল্ড আর নতুন প্রণীত Dollar Standard (বাংলাদেশের টাকা/জাপানী ইয়েন)= ডলার

(বেচারা হাজার হাজার বছর ধরে এক্সেচেঞ্জ হিসেবে চলে আসা গোল্ডকে বাতিল করে একটা
সাধারণ পন্য বানিয়ে দেয়া হল)

আবার সে সময়ে অ্যামেরিকা 
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী ছিল ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তেলের দাম US Dollar এই নির্ধারণ করা হত।  তাই তখন ডলার এর ভ্যালু কমা থেকে নিস্তারের জন্য রিচার্ড নিক্সন সৌদি আরবের সাথে ঐকমতে এসে একটা চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তি অনুয়ায়ি-এর পর
থেকে তেল শুধু ডলারের মাধ্যমেই কিনা যাবে অন্য কোন কারেন্সি বা সম্পদ দিয়ে নয়, তো এর পরে পর্যায়ক্রমে OPEX এর সকল দেশ এই
চুক্তির সাথে একমত হয়ে যায় আর তারপর থেকে ডলার পেট্র-ডলারে রূপান্তর হয় ফলে US Dollar এর চাহিদা বাড়তে থাকে আর আমেরিকা
তাদের অতিরিক্ত ছাপানো (মুদ্রাস্ফীতি) কাগুজে ডলার অন্য দেশে  রপ্তানি শুরু করে ৷
অচিরেই এই মানি টয়লেট পেপার হয়ে যাবে যখন ডলার কলাপ্স করবে




অর্থনীতিবিদ মাইক মালনি বলেন আমেরিকা তাদের ইনফ্লেশন কেই বিক্রি করে। তারা যত ইচ্ছা ডলার ছাপাই আর অন্য দেশের কাছে তা বিক্রি করে, এই ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোন জবাবদিহীতা নেই। তেমনি আমাদের সম্পদ তারা শুধু কিছু টুকরো কাগজের বিনিমরে কিনে নিচ্ছে, সৌদি আরব ও অন্যান্য সকল দেশের তেল কিনে বিনিময়ে কাগজ ছাপিয়ে দিয়ে দেই, তাদের কোন চিন্তা নেই, এই ভাবেই মুসলমানদের সম্পদ তারা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার যখন ইচ্ছা বেশি ছাপিয়ে মুদ্রাস্ফীতি করে দেই ফলে গরিব দের সম্পদ কে টেনে নিয়ে নেই, তাই মুদ্রাস্ফীতি/ Inflation কে আমরা ম্যাক্রো লেভেলের সুদ বলতে পারি, যা সময়ের সাথে সাথে মানুষের টাকা গ্রাস করে নিচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,


“তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়
ভাবে গ্রাস কর না” (সূরা বাকারা-১৮৮)

অন্যভাবে বললে বর্তমানে ক্রুড তেল ই আগের গোল্ড এর জায়গা নিয়ে নিল। তখন সেই হাদিস টি খুব স্পষ্ট হয়ে গেল যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ


 ‘‘তত দিন পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতদিন না ফুরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। মানুষেরা এটি দখল করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এ যুদ্ধে শতকরা ৯৯ জনই নিহত হবে। তাদের প্রত্যেকেই বলবেঃ আমিই এ যুদ্ধে রেহাই পাবো এবং স্বর্ণের পাহাড়টি দখল করে নিবো’’  [বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান]


অর্থাৎ এখানে বর্তমান তেলের কথাই বলা হয়েছে যা ফুরাত নদীর আশেপাশে থেকেই বের হয়েছিল। আর একে নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে মারামারি শুরু হল যা এখনো চলছে। আমরা জানি দাজ্জালের কাছে সম্পদের অসংখ্য পাহাড় থাকবে। তারই প্রস্তুতি হিসাবে ইহুদীরা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে এই মুদ্রাব্যবস্থার মাধ্যমে। (আল্লাহু আলাম)


হাদিসের মাধ্যমে কিভাবে ‘স্বর্ণপাহাড়’ এর দ্বারা বর্তমান তেলের খনি উদ্দেশ্যে করা হচ্ছেঃ

আবু সাইদ (রা) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,একদিন বেলাল (রা) কিছু ‘বারনি'(উন্নত জাতের) খেজুর নিয়ে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা দেখে বললেন,কোত্থেকে নিয়ে এলে
এসব? বেলাল (রা) উত্তর দিলেন,আমার কাছে কিছু খারাপ খেজুর ছিল। সেগুলো দুই সা'দিয়ে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর জন্য এর এক সা'কিনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,হায়! একি করেছ?
এটাতো খাঁটি সুদ। তুমি আর এমন করেবে না যখন কিনতে চাইবে,আলাদাভাবে আগে সেটা বিক্রি করবে। তারপর সেই মূল্য দিয়ে এটা কিনবে। (বুখারি : ২২০২, মুসলিম : ১৫৯৪) ইবনে মুসাইয়াব বলেন,বাকিতে এক উটের মোকাবেলায় দুই উট কিংবা এক ছাগলের বিনিময়ে দুই ছাগল
বেচায় কোনো সুদ নেই। (ফাতহুল বারি : ৪/৪১৯)
এখন সাধারন জিজ্ঞাস ছিল এই যে কেন খেজুরের বিনিময়ে অতিরিক্ত বা উন্নত মানে খেজুর লেনদেন হল সুদ আর অন্যদিকে সাহাবারা যখন উটের বিনিময়ে বেশি উট বা ছাগলের বিনিময়ে বেশি ছাগল পরিবর্তন করতেন তখন সেটা সুদ নয়? আসলে তত সময়ে সে সময় খেজুর বিনিময়ের মাধ্যম (বর্তমান টাকা) হিসেবে
ব্যবহার হত। তখন স্বর্ণ ও রূপা ছাড়াও যেসব জিনিষ টাকার মত ব্যবহার হত তা হল-
আবু সাইদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-‘সোনার বদলে সোনা,রুপার বদলে রুপা,গমের বদলে গম,যবের বদলে যব,খেজুরের
বদলে খেজুর এবং লবণের বদলে লবণ বিক্রি করো নগদ নগদ এবং সমান সমান। যে বেশি দিবে অথবা বেশি নিবে সেটা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। দাতা-গ্রহীতা এক্ষেত্রে সমান
অপরাধী।  (মুসলিম : ১৫৮৪)
কিন্তু উট ছাগল বা অন্যান্য পশু বা এমন কিছু যার স্থায়িত্ব কম, এই জাতীয় জিনিষ গুলো টাকা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না কারন যদি একজনকে তার ১ মাসের কাজ শেষে মজুরি বাবদ ১০ কেজি খেজুর বা স্বর্ণ দিনার মুদ্রা না দিয়ে যদি তাকে ১ টা ছাগল দেয়া হয় তবে সেটা অনেক সমস্যার মধ্যে ফেলে দিবে যেমন- ছাগল নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় ছাগল মরে যেতে পারে। তাই স্বর্ণ বা রূপার অনুপস্থিতিতে গম, যব,খেজুর, লবন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আর যেহেতু এই গুলো বিনিময়ের মাধ্যম তাই এই গুলোর অসম বিনিময় হল সুদ। অতিতে স্বর্ণের যা উপযোগিতা ছিল মানে প্রধান মুদ্রা মাধ্যম ছিল স্বর্ণ। আর রাসূল (সা) এর স্বর্ণের পাহাড় বলতে এখানে স্বর্ণের অলঙ্কার বুঝাননি এখানে সেই স্বর্ণের কথা বলা হয়েছে যে স্বর্ণ, মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হত। বর্তমানে স্বর্ণ মুদ্রা হিসেবে
ব্যবহার হয় না। এখন ডলার হল মুদ্রা হিসেবে মূল চালিকাশক্তি আর এই ডলার হল পেট্র-ডলার। আমরা পূর্বেই দেখিয়েছি কিভাবে তেল স্বর্ণের যায়গা নিয়ে নিয়েছে। আর প্রচুর তেলের খনি সেই ফুরাত নদীর আসে পাশে থেকে বের হয়েছে শেষ শতাব্দীতে।


দাজ্জাল ও সূদের ছিটাঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে এমন
একটি যুগ আসবে, যখন তারা সুদ খাবে’ বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে নবীজি (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সমস্ত মানুষ (সুদ খাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, “তাদের যে
লোক সুদ খাবে না, সুদের ধূলা তাকেও গ্রাস করবে।” [সুনানে আবু দাউদ, খণ্ডঃ ৩, পৃষ্টাঃ ২৪৩]
অর্থাৎ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে যখন একটি মানুষও রিবা (সুদ) হতে অব্যাহতি পাবে না সে সরাসরি রিবা না খেলেও রিবার ধোঁয়া
বা ধূলিকণা অবশ্যই তাকে স্পর্শ করবে।  এটা কি এই যুগ নয়? আমরা দেখিয়েছি, এই কাগুজে
মুদ্রার সময়ানুপাতিক হারে মুদ্রাস্ফীতি (মূল্যহ্রাস) আমাদের থেকে কিভাবে আমাদের সম্পদ
গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সুদি সিস্টেম কি, রাসূল (সাঃ) ভবিষ্যৎবানী করা সেই সুদের ধুলা নয় যা আমাদের সকলের গায়ে লাগছে?
ম্যাক্রো লেভেলে মুদ্রাস্ফীতি তথা সুদ দেখার পর এখন মাইক্রো লেভেলে সুদ কে লক্ষ্য করলে
বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। আল্লাহ্ সুবাহানা ওয়া তাআলা রিযিকের মালিক উনি ঠিক করবেন কে ধনী থাকবে, না কি গরীব কিন্তু এই দাজ্জালি সিস্টেম নিজেই আগে বেড়ে আল্লাহ্র নিয়মের
তোয়াক্কা করে এমন ভাবে সিস্টেম সাজিয়েছে যাতে নিশ্চিত করা হয়েছে, যে ধনীরা স্থায়ীভাবে ধনী ও গরীবরা স্থায়ী ভাবে গরীব থাকে। আর এটাই হল সুদের নেতিবাচক দিক যার কারনে একে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে

বীমা (জুয়ার আর এক নাম) বা
ইনস্যুরেন্স হল একটি সাধারণ উদাহরণ --


এক (ধনী) ব্যক্তি জাহাজ ভর্তি পন্য আমদানী করে নিয়ে আসছে, কিন্ত সমুদ্রে জাহাজ ও পন্যের ক্ষতি হতে পারে, তাই সে ক্ষতি এড়ানোর জন্য বীমা করিয়েছে, এখন যদি ক্ষতি হয় তবে বীমা কোম্পানি সেই ক্ষতিপূরণ দিবে। (বীমা কোম্পানি
অনেক গুলো এমন বীমা করায় আর বিনিময়ে চার্জ গ্রহণ করে, ফলে যদি একটি জাহাজের কোন ক্ষতি হয়ে যায়, তবে সে সহজেই অনেক গুলো জাহাজের চার্জ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে ক্ষতি পূরণ দিতে পারবে। কারন সব গুলো জাহাজ এক সাথে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না)।
সুতারাং আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন সেই (ধনী) ব্যক্তি কিছু চার্জ প্রদান করার ফলে নিশ্চিত হয়েছে তার কোন লোকসান হবে না। সর্বশেষ পন্য
বাজারে উঠানো হলে তখন তার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পন্যের দাম +পরিবহণ খরচ এর সাথে ইনস্যুরেন্স চার্জও যোগ করা হলো, এতে পন্যের
দামও বেড়ে গেল। আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই ধনী ব্যক্তির আল্লাহকে রিযিক দাতা মনে করে পণ্য নিয়ে আসার কথা ছিল, এতে যদি তার ক্ষতি হত তবে সেটা আল্লাহ্র ইচ্ছায়। কিন্ত সে যাতে লোকসানের শিকার নাহয় তাই বর্তমান সিস্টেম ইনস্যুরেন্সের সুবিধা আনলো যাতে নিশ্চিত করা
হয় যে, সে ধনী ব্যক্তি স্তায়ী ভাবে ধনীই থাকবে, আর উপর দিকে পন্যের যে অতিরিক্ত খরচ (চার্জ) তা সকল (গরীব) ক্রেতাদের ঘাড়ে চাপানো হল, অর্থাৎ গরীব স্থায়ী ভাবে গরীব থাকবে।
সুদ তো আরও ভয়ঙ্কর এখন যদি আমরা সুদের দিকে তাকায় - ধরি সেই (ধনী) ব্যক্তির নিজস্ব মূলধন নেই তাই সে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পন্য
আমদানী করেছে ফলে তার ব্যবসায় তো ভালোই, কিন্তু তার সেই ঋণের (Loan) টাকার উপর যে সুদ আসলো সেই অতিরিক্ত খরচও পন্যের মধ্যে যোগ করা হলো এতে পন্যের দাম আরো বেড়ে গেল, আর গরীব ক্রেতাদের উপর আরও বড় আকারে বোঝা
ধনী আরও ধনী হচ্ছে গরীবের হাতে
চাপানো হলো।

ফলে ব্যাংকে ডিপসিটকারী ও 
ব্যাংক (ধনীব্যক্তি) রা নিশ্চিত হয়েছে তাদের কোন প্রকার লোকসান হবে না অন্যদিকে বেচারা গরীব ক্রেতারা সকল সুদ ও চার্জ এর বোঝা বহন করে আরো গরীব
হচ্ছে। বেশির ভাগ লোকের কাছে মূলধন কম
থাকায় তারা ব্যাংক লোন নিতে বাধ্য হচ্ছে আর এতে বিভিন্ন পন্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, এভাবেই আমরা সেই পন্য বেশি দামে কিনছি আর তা ব্যবহার করে সুদের ধুলা (ছিটাও) লাগাচ্ছি। সুদ আজ এত রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে যা কল্পনাও করা যায় না। যেমন--এখন আপনার গায়ে যে পোশাক তা তৈরিতে নিশ্চয় ব্যাংকের লোন (সুদ) ব্যবহৃত হয়েছে, যে চেয়ারে আপনি বসে আছেন
তাও সেই সুদ হতে পবিত্র নয়, এমনকি মসজিদ/মদ্রাসার/বাসা/অফিসে বিদ্যুৎ বিল যদি দেরি করে দেয়া হয় সেটাতেও চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ যোগ হয়ে যায় তখন আমাদের কে সরাসরি সুদ দিতে হয় যা আমাদের বিলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে ৷ একটা কথা আছে যে টাকা গাছে ধরে না, আসলে বাস্তবতা হল বর্তমান অর্থনীতি সিস্টেম গাছের চেয়েও অনেক গতিতে টাকা তৈরি করে। আর স্বর্ণ হলো একটা পণ্য যার ৬০% ব্যবহার করা হয় এখন শুধু জুয়েলারি হিসেবে, তাই স্বর্ণের পাহাড় বের হলেও সেটায় তেমন কিছু যাই আসেনা।  আমরা শুধু আমেরিকার সম্পদের অসম বন্টন দেখলেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারব।
আমারিকার মোট সম্পদ হলো ৫৪ ট্রিলিয়ন যার শতকরা ৪০ ভাগ সম্পদই আছে ১%  লোকের (ধনী এলিটদের) কাছে আর মাত্র ৭% সম্পদের
মালিকানা হলো আমেরিকার ৮০% লোকের আর বাকি ১৯% লোক ৫৩% সম্পদের মালিক। এই রিবা (মুদ্রাস্ফিতি/সুদ/ইউজারি/কুপন রেট) নিশ্চিত করেছে ধনী দের জন্য ঝুকিহীন বিনিয়োগ (Risk free investment) আর ফলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ধনীরা আরো ধনী ও দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে।

এই ব্যাংক হল ইয়াহুদীদের চালাকী 
যা মানুষের মন থেকে আল্লাহর প্রদত্ত নূর ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে (মনের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে
তাই এখন শুধু বাহিরের এক চোখে দিয়েই দেখছি) । আর তাই আমাদের দিনের পরদিন ঈমান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ফলে হালাল হারাম কোন পরোয়া করছি না।
মানুষের উপর এমন যুগ অবশ্যই আসবে যখন
মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে মাল-সম্পদ অর্জন করছে হালাল নাকি হারাম উৎস থেকে।(সহীহ বুখারী ৪:১৯৪৮) 
এটা কি সেই যুগ নয়?
দাজ্জালের দুই পাশে কৃত্তিম জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে, যে মুমিন তাকে জাহান্নামে ও ইমানহারাদের কে জান্নাতে নিক্ষেপ করবে। দাজ্জাল যাকে খুশী সম্পদশালী করবে আর যাকে খুশী দরিদ্র বানাবে, এখন তার অনুসারীরা এমন ভাবে দাজ্জালি সিস্টেম বানানোর ফলে যে
ইমানদার তার সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে আর যে ইমানহারা হয়ে আল্লাহ্র বিধানের দিকে না তাকিয়ে শুধু বাতিলের অনুসরণ করবে তাদের কে
সম্পদশালী করছে। আল্লাহ, আল্লাহ্র রাসূলের ও
মুমিনদের বিরুদ্ধে দাজ্জাল নিজে যুদ্ধ ঘোষণা করবে, দাজ্জালের আসার আগেই তার অনুসারীরা তার জন্য এমন সিস্টেম তৈরি করেছে যাতে সম্পৃক্ত হয়ে আদম সন্তানেরা অজান্তেই আল্লাহ ও তার রসূলেরবিরুদ্ধে দাড়িয়ে গেছে-
অতঃপর যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাকারা- ২:২৭৯)
সর্বশেষ শাইখ ইমরান হোসেনের আহবান দিয়ে শেষ করছি- বস্তুত রিবার (কাগুজে মুদ্রার ও সুদী
কর্মকাণ্ডের) ফাঁদে আবদ্ধ হয়ে বিশ্ব মানবতা আজ ধ্বংসের দোরগোরায় পৌঁছে গিয়েছে। ঘুমিয়ে থাকার মোটেও সময় নেই। গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠতে হবে মুসলিম উম্মাহকে। প্রতিটি মুসলিমকে রুখে দাঁড়াতে হবে রিবাসহ অন্যান্য গোমরাহি ও
আল্লাহ্ বিরোধী প্রতিটি বিধি-বিধান ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রিবা(সুদ) বর্জন করে প্রতারণা ও উন্নয়নের ভুয়া শ্লোগানের মাধ্যমে মুসলিমের সম্পদ লুটতরাজ কে প্রতিহত করতে হবে।


মন্তব্যসমূহ